দেশের শস্য ভান্ডারে যুক্ত হলো নতুন ছয় জাতের ধান

ওয়াহিম হোছাইন, দ্যা ডেইলি ইমেজ বিডিঃ
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) সম্প্রতি ছয়টি নতুন ধানের জাত উদ্ভাবন ও অনুমোদন দিয়েছে, যা দেশের শস্য ভান্ডারকে আরও সমৃদ্ধ করবে। এই ছয় জাতের মধ্যে পাঁচটি বিশেষভাবে বৈরী পরিবেশ যেমন বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতা সহ্য করতে সক্ষম। এখন ব্রির মোট ৩৭টি জাত রয়েছে, যেগুলো দেশের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃষকদের শক্ত সহায়তা করবে।
ধানের জাত ও বাংলাদেশের কৃষিতে গুরুত্ব
বিশ্বে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। ১৯৭১ সালে মাথাপিছু জমির পরিমাণ ছিল ২০ শতাংশ, যা বর্তমানে কমে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। এই সময়ে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ, কিন্তু খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে মাত্র চারগুণ।
স্বাধীনতার পর ব্রি উদ্ভাবিত প্রথম জাত বিআর-৩ বা বিপ্লব জাতের মাধ্যমে ধান উৎপাদনে এক বিপ্লব ঘটেছিল। ১৯৯৪ সালে ব্রি জাত-২৮ ও ২৯ উদ্ভাবিত হয়, যা উচ্চ ফলনের জন্য কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। বর্তমানে ব্রির উদ্ভাবিত জাত-৮৭, ৮৯, ৯২, ৯৬, ৯৮, ১০০, ১০২, ১০৫, ১০৭ ও ১০৮ মৌসুমভেদে সবচেয়ে জনপ্রিয়।
নতুন ছয় জাতের বৈশিষ্ট্য
ব্রি ধান-১০৯: জোয়ার-ভাটা সহনশীল, ডিগ পাতা খাড়া, গাঢ় সবুজ, গড় উচ্চতা ১২৮ সেন্টিমিটার। জীবনকাল ১৪৭ দিন। চাল লম্বা ও মাঝারি মোটা, সাদা রঙের।
ব্রি ধান-১১০: বন্যা ও জলমগ্নতা সহনশীল, গাছের উচ্চতা ১২০ সেন্টিমিটার, জীবনকাল ১২৩ দিন। চাল লম্বা, মাঝারি চিকন ও সাদা।
ব্রি ধান-১১১: জলি আমনের জাত, অগভীর বন্যায় টিকে থাকতে পারে, উচ্চতা ১৬২ সেন্টিমিটার, জীবনকাল ১৪৬-১৬০ দিন। চাল মাঝারি মোটা ও লম্বা, ভাত ঝরঝরে।
ব্রি ধান-১১২: লবণাক্ততা সহনশীল, গাছের উচ্চতা ১০৩-১০৫ সেন্টিমিটার, জীবনকাল ১২০-১২৫ দিন। চাল মাঝারি চিকন ও সাদা।
ব্রি ধান-১১৩: উফশী বোরো জাত, জাত-২৯-এর বিকল্প, উচ্চতা ১০২-১০৫ সেন্টিমিটার, জীবনকাল ১৪৩ দিন। চাল মাঝারি চিকন, সাদা।
ব্রি ধান-১১৪: ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী, মজবুত গাছ, গাঢ় সবুজ পাতার, জীবনকাল ১৪৯ দিন। চাল মাঝারি মোটা ও সোনালি।
কৃষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা
ব্রি ধান-১০৯ জাত জোয়ার-ভাটা মুক্ত এলাকায় প্রতি হেক্টরে ৬.৩২ টন এবং জোয়ার-ভাটা প্রবণ এলাকায় ৫.৪০ টন গড়ে ফলন দিয়েছে। সঠিক ব্যবস্থাপনায় এটি ৬.৫০ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম।
ব্রি ধান-১১০ জাত বন্যামুক্ত এলাকায় ৬ টন এবং বন্যাপ্রবণ এলাকায় ৫ টন ফলন প্রদর্শন করেছে।
ব্রি ধান-১১১ রোপা আমন মৌসুমে হেক্টর প্রতি ৪.৩-৫.৭ টন ফলন দিতে সক্ষম।
লবণাক্ততা সহনশীল ব্রি ধান-১১২ জাত উপকূলীয় লবণাক্ত জমিতে সূর্যমুখী ও সরিষা চাষের সুযোগ তৈরি করবে।
উফশী বোরো জাত ব্রি ধান-১১৩ উচ্চ ফলনের জন্য পরিচিত।
ব্রি ধান-১১৪ ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী হওয়ায় বোরো মৌসুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ব্রি’র গবেষণার ধারাবাহিকতা
ব্রি ১৯৭০ সাল থেকে ১২১টি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে, যার মধ্যে ৮টি হাইব্রিড জাত। নতুন ছয় জাত দেশের কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তায় বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।