রংপুর চিনিকল সাঁওতালদের জমি হারানোর শঙ্কা দূর করুন

দ্যা ডেইলি ইমেজ বিডি ডেস্কঃ
অন্তর্বর্তী সরকার দেশের চিনিকলগুলো চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। চিনির আমদানিনির্ভরতা কমানো এবং দেশীয় শিল্প রক্ষার বিবেচনায় নিঃসন্দেহে এটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। তবে রংপুর চিনিকল চালুর উদ্যোগকে ঘিরে সেখানকার বাসিন্দা সাঁওতাল জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা জমি হারানোর আশঙ্কা করছেন। এ জমি পাকিস্তান আমল থেকে চিনিকলের অধীনে আছে। সেই জমির অধিকার নিয়ে সাঁওতালদের সংগ্রাম নতুন নয়।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় সাঁওতালদের ভোগদখলীয় বাগদা ফার্মের ১ হাজার ৮৪২ একর জমি ১৯৬২ সালে আখ চাষের জন্য নেয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার। চুক্তি অনুসারে, চিনিকল চালু না থাকলে জমির মালিক বিবেচনায় সাঁওতাল জনগোষ্ঠীকে সেই জমি খেসারতসহ ফিরিয়ে দেওয়া হবে। সাঁওতালদের দাবি, তাদের কাছ থেকে নেওয়া সেই জমি দুই দশক ধরে আখ চাষের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে না। এর মধ্যে চরম লোকসানের কারণে বিগত সরকার রংপুর চিনিকলসহ দেশের ছয়টি চিনিকল বন্ধ করে দেয়। ২০১৬ সালে সেই জমির অধিকার কেড়ে নিতে সাঁওতালপল্লিতে ইচ্ছা করে আগুন লাগানো হয়। এ সময় সংঘর্ষে তিনজন সঁাওতাল নিহত হন। এ ঘটনায় অভিযোগ উঠেছিল আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ ও তাঁর চক্রের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া সাঁওতালপল্লিতে পুলিশের আগুন ধরিয়ে দেওয়ার একটি ভিডিও সে সময় তোলপাড় তৈরি করেছিল।
চিনিকলটি চালুর উদ্যোগের ফলে সাঁওতালদের উচ্ছেদে আবারও পাঁয়তারা চলছে বলে গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছে অধিকারভিত্তিক অনেকগুলো সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম জাতীয় নাগরিক সমন্বয় কমিটি। সেখানে বলা হয়, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, জনগণের অংশগ্রহণ, জমির ওপর নিয়ন্ত্রণ ও উৎপাদন—এসব বিষয় বিবেচনা করে সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। তাদের দাবি, বহু বছর ধরে চিনিকলগুলো অকার্যকর। এর ফলে চিনিকলগুলো চালু করার ক্ষেত্রে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হোক। আমদানির বিপরীতে চিনিকলগুলোর সম্মিলিত বার্ষিক উৎপাদন সামান্য হওয়ার পরও কেন চিনিকলগুলো চালু করা হচ্ছে, তাদের প্রশ্ন। অভিযোগ, আখচাষি ও চিনিকলশ্রমিকদের স্বার্থের কথা বলে একটি চক্র অর্থ লোপাটের পাঁয়তারা করছে।
চুক্তি অনুসারেই এ জমির মালিক সাঁওতালরা। তাঁরা এখন ওই জমিতে তিনটি ফসল ফলাচ্ছেন। তাঁদের সঙ্গে আছেন স্থানীয় কিছু বাঙালিও। এখন তাঁদের দাবি অনুসারে, আখ চাষের জন্য দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত না হওয়া এ জমির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে চিনিকল কর্তৃপক্ষ, করপোরেশন ও মন্ত্রণালয়কে। আমরা চাই না ২০১৬ সালের মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হোক। চিনিকলটি চালু হোক, এ নিয়ে দ্বিমত নেই। তবে সিস্টেম লস ও লোকসান দিয়ে তা হোক, সেটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। সেই সঙ্গে জমি নিয়ে জটিলতার সুরাহা আবশ্যক।