চবিতে পিআইবির উদ্যোগে ‘সংবাদ না বয়ান: গণমাধ্যমের ঝোঁক ও ঝুঁকি' শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)'র আয়োজনে এবং যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় চবি সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে আজ (২৬ জানুয়ারি, ২০২৫) রবিবার দুপুর ২ টায় ‘সংবাদ না বয়ান: গণমাধ্যমের ঝোঁক ও ঝুঁকি' শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)'র মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। এতে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন চবি যোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মোরশেদুল ইসলাম ও বিশিষ্ট কবি, বুদ্ধিজীবী ও ক্রিটিক রিফাত হাসান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা ও সভাপতিত্ব করেন চবি যোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খ.আলী আর রাজী।
চবি উপাচার্য বলেন, সাংবাদিকদের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করতে আজকাল দেখা যায় না। সাংবাদিকদের সঠিক তথ্য-উপাত্ত অনুন্ধানের মাধ্যমে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আজকাল সবক্ষেত্রে একটা নৈতিক স্ফলন জাতি দেখতে পাচ্ছে। তিনি বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশ সংস্কারে বেশ কিছু সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যেই গঠন করেছেন। কিন্তু এর সাথে আরও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল শিক্ষা সংস্কার কমিশন ও ব্যাংক সংস্কার কমিশন গঠন করা। উপাচার্য অন্তবর্তীকালীন সরকারকে এ দু'টো কমিশন গঠনের জন্য বিনীতভাবে আহবান জানান।
পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ফ্যাসিবাদী আমলে বয়ান বা গল্পের মাধ্যমে মিথ্যা ছড়ানো হয়েছে। ফ্যাসিবাদ গল্পের মাধ্যমে টিকে ছিল। তাদের বানোয়াট গল্পকে মানুষ প্রত্যাখ্যান করে ফ্যাসিবাদকে চ্যালেঞ্জ করেছে। ফ্যাসিবাদী শক্তি নানা বয়ান তৈরি করেছিল যেমন: উন্নয়নের বয়ান, মুক্তিযুদ্ধের বয়ান ইত্যাদি। কোনো জরিপ ছাড়াই মিডিয়ায় পরিসংখ্যান ছাপাতো। রাজনীতিবিদরা খারাপ বলে বয়ান দাঁড় করানো হয়েছে। গণমাধ্যম রাস্তার পাশে গাছ নষ্ট হওয়াকে 'হেফাজতের তাণ্ডব' বলে প্রচার করে তাদেরকে নৃশংসভাবে হত্যার বিষয়কে আড়াল করেছে। আওয়ামী লীগ দুর্গ সংস্কৃতি চর্চা করেছে। দুর্গ শহরের অধিবাসীরা তা মেনে নিয়েছে। এ দেশের আশ্রয়স্থল সীমান্তের ওপারে, এভাবে তারা বিশ্বাস লালন করেছে। একাত্তরের পর দুর্ভিক্ষের বয়ান মুছে ফেলা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের বয়ান নিজেদের মতো সাজিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান আমরা স্বীকার করি, তবে আর কতো কিছু দিয়ে তা শোধ করবো? রাষ্ট্র হারিয়েছি, সেটা বলতে হবে। মিডিয়ার বয়ানের মাধ্যমে আমরা সব হারিয়েছি। মিডিয়া ছাড়া ফ্যাসিবাদ এতো সময় টিকে থাকতে পারতো না। বুদ্ধিজীবীদের ডাকে মানুষ আন্দোলন করেনি, শিক্ষার্থীরা নিজেরা বিকল্প মিডিয়া চালিয়েছে এবং ফ্যাসিবাদকে চ্যালেঞ্জ করেছে। যেকোনো সফল বিপ্লবে অলৌকিক মুহূর্ত দরকার। আবু সায়ীদ যেভাবে দাঁড়িয়েছে, সেটা ছিল জুলাই বিপ্লবের অলৌকিক মুহূর্ত।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদী আমলে ছাত্রলীগ না করলে চাকরি মিলতো না। যাতে আবার আরেকটি বিডিআর হত্যাকান্ড ঘটতে না পারে, সেটা মিডিয়া বলেনি। নতুন বাংলাদেশ যারা গড়েছেন, তাদের মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী, কবি, সাংবাদিক নেই। পুরো মিডিয়া এখনো ফ্যাসিবাদীদের নিয়ন্ত্রণে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের মুখে থলি পড়িয়েছে ফ্যাসিবাদী মিডিয়া। এ অবস্থায় ডান, বাম, মধ্যপন্থী সব দল-মত নির্বিশেষে বাংলাদেশপন্থীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এ লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
বিশিষ্ট কবি, বুদ্ধিজীবী ও ক্রিটিক রিফাত হাসান বলেন, ফ্যাসিবাদী যুগ থেকে আমরা বেরিয়েছি ঠিক কিন্তু পুরোপুরি বের হতে পেরেছি কিনা, এটা আমাদের দেখতে হবে। সাংবাদিকরা কখনো সত্য বলে না, সত্য ম্যানুফ্যাকচার করে। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকরা বিগত সরকারের সময় গৃহপালিত সাংবাদিকতা করেছেন। এটা থেকে তাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। বস্তুনিষ্ঠ ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে সত্য অনুসন্ধান করতে হবে।
প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মোরশেদুল ইসলাম বলেন, 'কম গণতন্ত্র, বেশি উন্নয়ন' এ ন্যারেটিভ তৈরি করা হয়েছে। মিডিয়া একাই ন্যারেটিভ তৈরি করে না, সমাজও ভূমিকা পালন করে। গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পারস্পরিক সম্পর্কিত। সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন। কিন্তু তারা কিভাবে উঠে এসেছেন, তাও দেখা দরকার।
অনুষ্ঠানের উপস্থাপক যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খ, আলী আর রাজী অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। একইসাথে পিআইবি কর্তৃপক্ষকেও ধন্যবাদ জানান। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি ও বিভাগের পক্ষ থেকে সহযোগিতার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ জানান।