একনেকে ‘স্কুল ফিডিং’ প্রকল্প অনুমোদন

Mar 24, 2025 - 10:30
একনেকে ‘স্কুল ফিডিং’ প্রকল্প অনুমোদন

অনলাইন ডেস্কঃ

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খাদ্য কর্মসূচি শীর্ষক স্কুল ফিডিং প্রকল্প অনুমোদন করেছে।

রোববার (২৩ মার্চ) প্রধান উপদেষ্টা এবং একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিকল্পনা কমিশন চত্বরে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে এ তথ্য জানান পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খাদ্য ও পুষ্টিসেবা নিশ্চিত করতে এবং স্কুলে তাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের ১৫০টি উপজেলার ১৯ হাজার ৪১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হবে।

জানা গেছে, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি’ নামে নতুন প্রকল্পটিতে প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পরিচালক মিরাজুল ইসলাম উকিল বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্কুল শিক্ষার্থীদের পুষ্টির অভাব দূর করা হবে। এতে শিক্ষার্থীদের শারীরিক সুস্থতা এবং মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে, যা তাদের শিক্ষার মান বাড়াবে। পুষ্টিকর খাবারের মাধ্যমে একটি শিশুর শারীরিক এবং মানসিক উন্নতি হবে, যা তার শিক্ষা শেষ করা সহজ করবে।

খাবার তালিকা এবং বিতরণ পদ্ধতি -

স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামটি স্কুল চলাকালীন সপ্তাহে পাঁচ দিন পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করবে। প্রতিটি শিশুকে বিস্কুট, বান, কলা, ডিম এবং আল্ট্রা-হাই টেম্পারেচার (ইউএইচটি) দুধ দেওয়া হবে, যা তাদের দৈহিক এবং মস্তিষ্কের উন্নতির জন্য অত্যন্ত জরুরি।

এই প্রোগ্রামটি ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এবং এটি প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়িত হবে। সরকার আশা করছে যে, এই প্রোগ্রামটি শুধুমাত্র পুষ্টির অভাব দূর করবে না, বরং ছাত্রদের মনোযোগ, উপস্থিতি এবং শিক্ষা অর্জনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

শিক্ষার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ -

স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামটি শুধু শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করবে না, বরং দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সমাজে শিক্ষার মান উন্নয়নে একটি বড় ভূমিকা রাখবে। অভুক্ত বা পুষ্টির অভাবে শিশুদের মনোযোগ কমে যায়, যার কারণে তাদের শিক্ষার মানে বিরূপ প্রভাব পড়ে। পুষ্টিকর খাবার প্রদানের মাধ্যমে, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আরও ভালো মনোযোগী হবে এবং তাদের পারফরম্যান্স বৃদ্ধি পাবে।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য -

শুধু শিক্ষা নয়, এই প্রকল্পের মাধ্যমে শিশুদের স্বাস্থ্যের উন্নত হবে, যা ভবিষ্যতে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে সহায়ক হবে। বিশেষ করে দরিদ্র এলাকায় শিক্ষার্থীদের পুষ্টির অভাব বেশ প্রকট, ফলে অনেকেই স্কুলে যেতে চায় না বা পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে না। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে, সেই অবস্থা পরিবর্তন করা এবং আরও শিশুদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ তৈরি করা।

আগের প্রোগ্রামের পরিপূরক -

বাংলাদেশে স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামের ইতিহাস দীর্ঘ। ২০০১ সালে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সমর্থিত এই প্রোগ্রামটি শুরু হয়েছিল এবং বিভিন্ন পর্যায়ে এটি চালু ছিল। সর্বশেষ, ২০১০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত "স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম ইন পোভারটি-স্ট্রিকেন এরিয়াজ (থার্ড অ্যামেন্ডমেন্ট) নামে একটি প্রকল্প চলছিল। ২০২১ সালে সরকার ৪৯২টি উপজেলায় এই প্রকল্পের আওতায় পুষ্টিকর খাবার বিতরণের অঙ্গীকার করেছিল। বর্তমানে, এই নতুন উদ্যোগটি আগের কার্যক্রমকে আরও বিস্তৃত এবং শক্তিশালী করবে।