কীটনাশক প্রয়োগে কৃষকের অসতর্কতা, নিজেই বিষ গিলে বাঁচার চেষ্টা

May 1, 2025 - 13:59
কীটনাশক প্রয়োগে কৃষকের অসতর্কতা, নিজেই বিষ গিলে বাঁচার চেষ্টা

বাংলাদেশের মাঠে যখন ধান গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়, তখনই তার শরীরে বসে নানা পোকার উপদ্রব। এই পোকা দমন করতে গিয়ে কৃষক নামেন কীটনাশক ছিটাতে। কিন্তু একসময় দেখা যায়, ফসল বাঁচাতে গিয়ে কৃষক নিজেই ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। কারণ— তিনি কীটনাশক ছিটাচ্ছেন, কিন্তু সতর্কতার ন্যূনতম নিয়মও মানছেন না।

অসংখ্য ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, কৃষক কীটনাশক স্প্রে করছেন খালি হাতে, মুখে মাস্ক নেই, চোখে চশমা নেই, এমনকি কখনো কখনো গালে লাগিয়ে নিচ্ছেন কীটনাশকের প্যাকেট! যেন এটা কোনো ঠাণ্ডার ওষুধ! অনেকে তো আবার মোড়ক দাঁতে কেটে ছিঁড়েন, বিষাক্ত তরল হাত বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে মুখে, গায়ে। এ চিত্র আজও দেশের বিভিন্ন গ্রামে প্রতিদিনের।

কেন এই অসতর্কতা?

প্রথমত, তারা অনেকেই জানেন না এই বিষ কী ভয়ংকর ক্ষতি করতে পারে।

দ্বিতীয়ত, তাদের হাতে নেই সুরক্ষা সরঞ্জাম, আর থাকলেও "এর কী দরকার?"— এই ভাবনাটাই মস্ত ভুল।

তৃতীয়ত, অধিকাংশ কৃষকের মধ্যে এখনো একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে— “বেশি দিলে ভালো কাজ হবে।” তাই তারা মাত্রা ছাড়িয়ে কীটনাশক দেন, নিজের শরীরের দিকে একটিবারও ভেবে দেখেন না।

কি হয় এর ফলে? 

শুরুতে হয় মাথা ঘোরা, বমি, চোখে পানি আসা, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট।

এরপর ধীরে ধীরে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, চামড়ায় সমস্যা হয়, কিডনি ও লিভারে প্রভাব পড়ে।

বছর শেষে যে টাকা ফসল বিক্রি করে হাতে পান, তার বড় একটা অংশ চলে যায় চিকিৎসায়। এমনও দেখা গেছে, অসতর্ক স্প্রের কারণে অজান্তেই কেউ কেউ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন।

প্রতিকার কী -

১. মাস্ক, গ্লাভস ও সুরক্ষা চশমা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং তা সুলভে সরবরাহ করতে হবে।

২. কীটনাশকের মোড়কে সচেতনতা বার্তা স্পষ্টভাবে দিতে হবে, যেন চোখে পড়ে এবং পড়তে উদ্বুদ্ধ করে।

৩. গ্রামে গ্রামে কৃষক প্রশিক্ষণ ও ডেমো স্প্রে শো চালু করা জরুরি—যেখানে কৃষকরা হাতে-কলমে শিখবে কীভাবে নিজের জীবন রক্ষা করে স্প্রে করতে হয়।

৪. স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে নজরদারি ও পরামর্শ দেবেন—এটা নিয়মিত করতে হবে, শুধু অফিসে বসে কাগজেই করলেই হবে না।

একজন কৃষক দিনের পর দিন বিষ নিজের শরীরে ঢুকিয়ে জানেন না, তিনি কীসের দিকে এগোচ্ছেন। ফসল যেমন তার জীবিকা, তেমনি নিজের শরীরই তার আসল শক্তি। আমরা যদি কৃষকের এই বিষময় অসতর্কতা থামাতে না পারি, তবে শুধু ফসল নয়, কৃষকের জীবনও ধ্বংস হবে।

এখন সময় এসেছে কৃষকদের বলার-

"ফসল বাঁচাতে গিয়ে তুমি যেন নিজেকেই শেষ করে না দাও। সতর্ক হও, সুরক্ষিত থাকো।"

✍️ ওয়াহিম হোছাইন

কলামিস্ট, দ্যা ডেইলি ইমেজ বিডি।