কল্পলোকের ড্রাগন ফল, কমিয়ে দেয় বয়সের ছাপ

ওয়াহিম হোছাইন,দ্যা ডেইলি ইমেজ বিডিঃ ড্রাগন—শুনলেই যেন কল্পলোকের আগুন ছুঁড়ে দেওয়া এক প্রজাতির নাম মনে হয়। অথচ এই "ড্রাগন" আজ বাংলাদেশের মাটিতেও রক্তিম ফলের শরীরে ফলন দিচ্ছে। তার ভেতরটা শুভ্র, বীজে ভরা, বাইরের খোলসটা যেন আগুনরাঙা আঁচড়। এর স্বাদে আছে তরমুজের শীতলতা আর কিউইর সূক্ষ্ম মিষ্টতা। এই ফলের নাম—ড্রাগন ফল।
কেন খাবেন ড্রাগন ফল?
খাবারের চেয়ে বেশি এক বিস্ময় এই ফল। পুষ্টি, স্বাদ, ও স্বাস্থ্যগুণে ড্রাগন ফল নিজেকে অন্যসব ফল থেকে আলাদা করে নিয়েছে। এতে রয়েছে—
▪️অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা বয়সের ছাপ কমায়, ত্বক রাখে ঝলমলে।
▪️ভিটামিন C ও B-কমপ্লেক্স, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
▪️ফাইবার, যা হজমে সহায়ক এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
▪️লো ক্যালরি, অর্থাৎ ওজন কমাতে চাওয়া ব্যক্তিদের জন্য আদর্শ এক ফল।
▪️ডায়াবেটিস রোগীর জন্যও উপযোগী, কারণ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম।
▪️শুধু শরীর নয়, চোখেও আরাম দেয় এই ফল। রঙে, ঢঙে, এবং কেটে খাওয়ার সৌন্দর্যে একেবারে ইনস্টাগ্রাম-যোগ্য!
বিশ্ব যখন জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে, তখন কৃষিকে হতে হবে টেকসই। ড্রাগন ফল চাষ সেই আশার নাম। কেননা—
▪️এটি কম পানি ও কম সার চায়।
▪️রোগবালাই খুব কম, তাই কীটনাশক প্রায় লাগে না।
▪️দীর্ঘমেয়াদি গাছ—একবার চাষ করলে ২০ বছর পর্যন্ত ফলন দেয়।
▪️পাহাড়ি ও উঁচু জমিতে উপযোগী, যেখানে অন্য ফসল কষ্টে টিকে।
▪️এক হেক্টর জমিতে বছরে ১০-১৫ টন পর্যন্ত ফলন হতে পারে।
চাষ পদ্ধতিও বেশ শিল্পময়। সিমেন্টের খুঁটি গেঁড়ে চারপাশে চারটি করে চারা লাগানো হয়। গাছ উপরের দিকে উঠে ছাতার মতো ছড়ায়। গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় সাদা ফুল ফোটে—জ্যোৎস্নার মতো; ভোর হলে তা মিলিয়ে যায়। এ এক নিভৃতে সৌন্দর্য।ড্রাগন ফল শুধু ভোক্তাদের নয়, উদ্যোক্তাদের জন্যও এক সুবর্ণ সুযোগ। দেশের বাজারে এর কদর বাড়ছে, এক কেজি ড্রাগনের দাম ৩০০ টাকার ওপরে। এক একর জমিতে শতাধিক খুঁটি বসিয়ে চাষ শুরু করলে এক মৌসুমেই লক্ষাধিক টাকা আয়ের সম্ভাবনা।বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল, চট্টগ্রাম, সিলেট, এমনকি রাজশাহী অঞ্চলের অনেক কৃষক ইতোমধ্যেই সফলভাবে ড্রাগন ফল চাষ করে দেখিয়েছেন।
ড্রাগন ফল একটি বিপ্লব—খাদ্যতেও, কৃষিতেও। এটি শুধু ফল নয়, এটি সৌন্দর্য, স্বাস্থ্যের চাবিকাঠি, এবং একজন তরুণ কৃষকের জন্য জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার হাতিয়ার। এখন সময়, আমরা যেন নিজের প্লেটে এই "অগ্নিদ্বীপের ফল" তুলে নিই—আর মাঠে, উঠানে, পাহাড়ে যেন তার লাল ছায়া পড়ে..