চা খাওয়ার উপকারিতা

Jul 14, 2024 - 13:47
চা খাওয়ার উপকারিতা

বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পানীয়ের তালিকায় নিঃসন্দেহে ওপরের দিকে থাকবে চায়ের নাম। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যমতে, পানির পরে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পান করা তরল পদার্থ হলো চা। অনেকের কাছে চা পান কেবলই একটি অভ্যাস হলেও, এর রয়েছে বেশ কিছু স্বাস্থ্যগুণও। ক্লান্তি দূর থেকে শুরু করে আয়ু বৃদ্ধি পর্যন্ত - চা পানের স্বাস্থ্যগত দিক নিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলেছে নানা ধরনের জরিপ ও গবেষণা। আর প্রকাশিত সেসব গবেষণার ফলাফলে উঠে এসেছে চা পানের বিভিন্ন ইতিবাচক দিক।

চা মূলত তৈরি করা হয় ক্যামেলিয়া সিনেসিস নামের চিরহরিৎ গুল্ম থেকে। এই ছোট গাছের পাতা এবং পাতার কুঁড়ি সংগ্রহ করে এর থেকে চা উৎপাদন করা হয়। সচরাচর ব্ল্যাক টি বা র চা, গ্রিন টি বা সবুজ চায়ের মতো বিভিন্ন ধরনের নাম শোনা গেলেও তা মূলত এই উদ্ভিদ থেকেই ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে, পদ্ধতিতে বা পরিস্থিতিতে চাষ করা হয়ে থাকে।

কফির চেয়ে চা এগিয়ে?

মূলত ক্যাফেইনের কারণেই চায়ের মতো পানীয়ের দিকে বেশিরভাগ মানুষ ঝুঁকে থাকে। সকাল সকাল ঘুম তাড়িয়ে তাজা হতে চা অনেকটা ইঞ্জিনের তেলের মতোই কাজ করে। আরেকটি পানীয় কফি বেশ জনপ্রিয় হলেও চায়ের থেকে তা কিছুটা পিছিয়ে। এর একটি কারণ হতে পারে এতে থাকা ক্যাফেইনের পরিমাণ। সমান সাইজের এককাপ কফিতে যেখানে ৮০ থেকে ১১৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে, সেখানে একই পরিমাণ চায়ে থাকে ৪০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন, তুলনা করলে যার পরিমাণ দাঁড়ায় অর্ধেকেরও কম। লন্ডনের সারে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, একদিনে একই সমান চা-কফি খাওয়ার পর মনোযোগের ক্ষেত্রে অভিন্ন ফলাফল দেখা গেলেও রাতে ঘুমানোর সময় কফি খাওয়া ব্যক্তিদের কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়।

অন্যদিকে, যারা চা খায় তাদের তাদের ঘুম তুলনামূলক দীর্ঘ ও প্রশান্তিদায়ক হয়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় চা পান করলে স্নায়ু আরাম পায়। 

মানসিক চাপ কমায়

চায়ের মধ্যে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, এবং সাথে সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি উপাদান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। ফলে চা পান করলে স্নায়ু আরাম পায়। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আমরা যে ‘স্ট্রেস কন্ডিশন’ বা মানসিক চাপে পড়ে যাই সেখান থেকে আমাদের শরীরের ভেতরে অক্সাইডস নামের এক ধরনের উপাদান সৃষ্টি হয় বলে জানান সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান ও চা উৎপাদন প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এফ এম সাইফুল ইসলাম। 

অন্যদিকে চায়ের মধ্যে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। চায়ের মাধ্যমে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রবেশ করলে তা অক্সাইডসগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে ব্যক্তি মানসিক চাপ থেকে রেহাই পায় বলে জানান তিনি। এ ছাড়া চা মনকে চাঙ্গা করে, শরীর সতেজ করে এবং কর্মক্ষমতা বাড়ায়। চা যে মানুষের স্নায়ুকে শান্ত করে সে বিষয়টি বেশ কিছু গবেষণাতেও পাওয়া গেছে।

এতে দেখা গেছে, অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ভেষজ চা পানকারীদের তুলনায় নিয়মিত চা পানকারীরা তুলনামূলক শান্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়। এছাড়া অ ারেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন যারা অন্তত তিন কাপ চা পান করেন তাদের হতাশার ঝুঁকি চা পান না করা ব্যক্তিদের তুলনায় ৩৭ শতাংশ কম থাকে।চা মনকে চাঙ্গা করে, শরীর সতেজ করে এবং কর্মক্ষমতা বাড়ায়। 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

চা যে কেবল মানসিক চাপ কমায়, তা-ই নয়। বিভিন্ন গবেষণায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও চা পানের উপকারিতার দিকটি উঠে এসেছে। ২০০৯ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন কয়েক কাপ চা পানের ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে যায়। এই উপকারিতা ঠিক কতটুকু, সে সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা না গেলেও তা পাঁচ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে। চায়ে উপস্থিত অন্যান্য পুষ্টি উপাদানগুলো বিপাকে সাহায্য করে, যা কি না শরীরের ইনসুলিনকে ক্ষতিগ্রস্থ না করে রক্তের গ্লুকোজকে দক্ষতার সঙ্গে সামলায়। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, রং চা গ্রহণের পর শরীরের কোষ থেকে ১৫ গুণ বেশি ইনসুলিন বের হয়। আর ইনসুলিন পর্যাপ্ত পরিমাণে নির্গত হলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।