কালের স্রোতে মুছে যাচ্ছে নবান্ন উৎসব
বিধান চন্দ্র রায়, দ্যা ডেইলি ইমেজ বিডিঃ
বাংলার চিরায়ত কৃষিভিত্তিক সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান উৎসব ছিল নবান্ন—নতুন ধান ঘরে ওঠার আনন্দকে ঘিরে আয়োজিত এই উৎসব একসময় গ্রামবাংলার সমাজজীবনে ছিল সবচেয়ে প্রাণবন্ত দিনগুলোর একটি। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়া, জীবনযাত্রার ব্যস্ততা, এবং কৃষিকাজে যান্ত্রিক পরিবর্তনের কারণে সেই নবান্ন উৎসব আজ ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে।
গ্রামবাংলায় অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতেই উঠত নতুন ধান। কৃষকেরা জমিতে ধান কাটার পরপরই পরিবারের সবাইকে নিয়ে আয়োজন করতেন পিঠা-পায়েসের। ছিল আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীদের নিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করার উৎসব। নতুন ধানের চাল দিয়ে বানানো খিচুড়ি, চিতই-পুলি পিঠা, পায়েস—সব মিলিয়ে জমে উঠত এক উৎসবমুখর পরিবেশ।
কিন্তু সময় পাল্টেছে। আধুনিক কৃষি যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ায় ধান কাটার মৌসুম আর আগের মতো সম্মিলিত শ্রমের উৎসব থাকে না। গ্রামে-গঞ্জে পারিবারিকভাবে পিঠা বানানোর আয়োজনও কমেছে। তরুণ প্রজন্মের অনেকেই নবান্নের ইতিহাস, তাৎপর্য কিংবা আনন্দঘন রীতিনীতির সঙ্গে পরিচিত নয়। শহরমুখী জীবনে ব্যস্ত পরিবারগুলো আর গ্রামে ফিরে উৎসব পালন করতে পারে না। ফলে নবান্ন ধীরে ধীরে হারাচ্ছে তার ঐতিহ্যগত অবস্থান।
যদিও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিবছর সীমিত পরিসরে নবান্ন উৎসব পালন করে ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছে, তবুও সামাজিক ও পারিবারিক উদযাপন কমে যাওয়ায় উৎসবটি বিলুপ্তির পথে। বিশেষজ্ঞদের মতে, লোকজ সংস্কৃতি রক্ষায় পরিবার ও সমাজের সক্রিয় ভূমিকা জরুরি। কৃষিভিত্তিক এই উৎসবকে টিকিয়ে রাখতে নতুন প্রজন্মকে পরিচিত করতে হবে বাংলার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও লোকজ জীবনের সঙ্গে।
বাংলার মাটি, মানুষ আর কৃষিসংস্কৃতির প্রতীক নবান্নকে পুনর্জীবিত করতে এখনই প্রয়োজন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক উদ্যোগ। নয়তো কালের স্রোতে এই ঐতিহ্য একদিন সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা থেকেই যায়।